শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব
১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই মার্চ (১২১৮ বঙ্গাব্দের ২৯ ফাল্গুন বুধবার,কৃষ্ণা ত্রয়োদশী) অবিভক্ত বাংলার গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার অন্তর্গত ওড়াকাঁন্দির পার্শ্ববর্তী সাফলাডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার মাতা-পিতার নাম অন্নপূর্ণা বৈরাগী ও যশোমন্ত বৈরাগী।
বংশ পরিচয় :- শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের
ওঁ শান্তি হরি
বংশ পরিচয় :- শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের পিতার নাম ছিল যশোমন্ত ঠাকুর এবং মাতার নাম অন্নপূর্না দেবী । উভয়েই ছিলেন পরম বৈষ্ণব । যশোমন্ত ঠাকুরের পাঁচ পুত্র । ঠাকুর হরিচাঁদ ছিলেন দ্বিতীয় । অন্যান্যরা হলেন কৃষ্ণদাস , বৈষ্ণবদাস , গৌরীদাস এবং স্বরূপদাস । ঠাকুর হরিচাঁদের পূব্ব্ পুরুষ রামদাস ঠাকুর ছিলেন মৈথিলী ব্রাহ্মন ও পরম বৈষ্ণব । তিনি তীর্থ পর্যটন করতে করতে বাংলাদেশে আসেন । তার অধঃস্তন পুরুষ সবাই ছিলেন ঈশ্বর পরায়ন । এই পবিত্র বংশেই অবতার রূপে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর জন্ম গ্রহন করেন । আবির্ভাবের পটভূমি :- স্রষ্ঠার সৃষ্ঠির সব কিছুই একটি সু-শৃঙ্খল নিয়মাধীনে চলছে । কোথাও বিশৃঙ্খলা দেখাদিলে প্রাকৃতিক শক্তি সেখানে শৃঙ্খলা বা সাম্য প্রতিষ্ঠা করেন । এই সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য মাঝে মাঝে এই ধরার বুকে অবতাররূপে ভগবনের আবির্ভাব ঘটে । আর এই কারেনই শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের শুভাগমন হয়েছিল । ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথিবীতে কি রাষ্ট্রীয় জীবন , কি সমাজ জীবন সকল ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল । কিছু সংখ্যক সুযোগ সন্ধানী মানুষ সাধারন মানুষের সততা ও সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ধর্মের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে । ধর্ম হয় শোষনের হাতিয়ার । ধর্মের বিকৃতি ঘটিয়ে ধর্মকে সীমিত গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে । ধর্মের আবরনে এক শ্রেনীর ভন্ডের দল অনাচার ও ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় । ধর্মে দেখা দেয় গ্লানি । মানুষ ধর্মহীন হয়ে এক প্রানহীন সত্বায় পরিনত হয় । ত্রয়োদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পরযন্ত ব্রাহ্মন্যবাদের আধিপত্য বিস্তার লাভ করে । এর ফলে সাধারন মানুষ তাদের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয় । ধীরে ধীরে সৃষ্ঠি হয় অমানবিক জাতিভেদ প্রথা । সাধারন মানুষদেরকে তাদের ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় । তাদের মন্দিরে প্রবেশের অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হয় । এমনকি হিন্দু ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্হ বেদ পাঠ , এমনকি শ্রবন নিষিদ্ধ করাহয় । এ সময় তৎকালীন রাষ্ট্র-নায়কদের ছত্রছায়ায় ব্রাহ্মন্যবাদীরা এদেশের আদি অধিবাসীদের উপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করে । ফলাফল স্বরূপ অনেকেই দলেদলে ধর্মান্তরীত হতে শুরু করে । অনেকেরই ধন-সমপত্তি কেড়ে নেওয়া হয় । সমাজ ব্যবস্হায় চরম ভেদ-বৈষম্য হওয়ায় একদল মানুষকে হীন পতিত ও অবহেলিত করে রাখা হয় । ছুৎমার্গের বিষবাষ্পে সমাজ জীবনে নেমে আসে অশান্তির কালো ছায়া । এই ছুৎমার্গীদের নিশ্পেষনে অতিষ্ট হয়ে দলে দলে অবহেলিত , নির্যাতিত লোক ধর্মান্তরীত হতে থাকে । এসময় সমাজ জীবনে গুরুবাদ ও গুরুমন্ত্রের খুব প্রভাব বিস্তার করে । প্রেমহীন গুরুর দেওয়া প্রানহীন মন্ত্রসাধনাই চুড়ান্ত ধর্মীয়-সাধনা বলে বিশ্বাস করতে জনসাধারন অভ্যস্হ হয়ে পড়ে । ফলে নিষ্ঠা-প্রেম-পবিত্রতা প্রভৃতি সদগূনের অনুশীলন অবশ্য করনীয় বলে বিবেচিত হতোনা । সমাজের এই অসহায় মানুষদের এই চরম অন্ধকরাছন্ন দিনে , মনুষ্যত্বের চরম লাঞ্চনায় মানবাত্মা নিঃস্ব- নিপীড়িত , অত্যাচারিত মানুষের মুক্তির পথ দেখাতে এবং ধর্মকে রক্ষার জন্য পূনব্রহ্ম অবতারের আবির্ভাবের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল । সমাজের অবহেলিত এই জনগোষ্ঠী যাদের মানুষ বলে গন্য করা হয়নি , যাদের চন্ডাল বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল , তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কেউ এগিয়ে আসেনি । ব্রাহ্মন্যবাদী বৈষ্ণবধর্মের কাছে যারা ছিল পশুবৎ , সেই অশ্পৃশ্য-চন্ডাল জাতির উদ্ধারের জন্য পরম প্রেমময় , পরম দয়াল , অকুল পাথারের কান্ডারী যুগাবতার শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর । কবি রসোরাজ তারক চন্দ্র সরকার লিখিত শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত গ্রন্হে হরি অবতারের সুন্দর বর্ননা দেয়া আছে — জীবোদ্ধার , প্রেমদান , প্রতিজ্ঞা পালন অন্নপূর্না , শচীবাঞ্ছা করিতে পুরন ।। বৈষ্ণবের কুটিনাটী খন্ডের কারন জীব উদ্ধারের জন্য হইলো মনন ।। সে কারনে অবতার হৈল প্রয়োজন সফলা নগরী যশোবন্তের নন্দন ।। উপরোক্ত কথাগুলির মধ্যে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অবতার হওয়ার যোগসুত্র রয়েছে । চৈতন্য ভাগবতের মধ্যম খন্ডের ২৬শ অধ্যায়ে দেখাযায় গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূ তাঁর মাকে বলেছেন– আরো দুই জন্ম এই সংকীত্তনারম্ভে হইব তোমার পুত্র আমি অবিলম্বে ।। এই মত তুমি মোর মাতা জন্মে জন্মে তোমার আমার কভু ত্যাগ নাহি মরমে ।। শ্রীজীব গোস্বামী কৃত চৈতন্য চরিত গ্রন্হে মহাপ্রভু তাঁর মাকে বলেছেন — তোমাকে এড়াতে শক্তি নাহিক আমার তব গর্ভে জন্মনিব আরো দুই বার ।। শেষ জন্ম নিব মাগো ঐশান্য কোনে হরি নামে মাতাইব সব জীবগনে ।। উক্ত গ্রন্হদ্বয়ের কথানুসারে মহাপ্রভূর দুই জন্মের এক জন্ম খেতরে শ্রীনীবাস রূপে । তাহলে দ্বিতীয় জন্ম কোথায় ? গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূর জন্ম নদীয়ায় হলেও লীলা সাঙ্গ করেন ওড়িষ্যা পূরীতে । সেখান থেকে ওড়াকান্দি ঈশান কোনে অবস্থিত । তাই বলা যায় তিনি পুনরায় ওড়াকান্দিতে হরিচাঁদ রূপে এসে কলির জীবদেরকে হরিনাম দান করে সেই প্রতিজ্ঞা পুরন করেছেন । শ্রীচৈতন্য ভাগবতের মধ্যম খণ্ডের ২৬ অধ্যায়ে দেখা যায় , গৌরাঙ্গের সন্ন্যাস গ্রহনের ইচ্ছা শুনে তাঁর ভক্তগন তাঁর বিরহে ব্যাকুল হলে তিনি তাদের প্রবোধ দেন এই বলে — সকল কালে তোমরা সকলি মোর সঙ্গ এই জন্ম হেন না জানিবা জন্ম জন্ম ।। এইমত আরো আছে দুই অবতার কীর্ত্তন আনন্দরুপ হইবে আমার ।। তাছারা শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত গ্রন্হে কবিরসরাজ তারক চন্দ্র সরকার আরো একটি প্রমান দিয়েছেন । মহাপ্রভু যখন দারূব্রহ্মের সঙ্গে মিশে গিয়ে লীলা সাঙ্গ করেন তখন ভক্তগন কাতর হয়ে উক্ত বিগ্রহের উপর চড়াও হন ।তখন শূন্যবানী হয়– মানুষে আসিয়া , মানুষে মিশিয়া করিব মানুষ লীলে । সেইত সময় , পাইবে আমায় পুনশ্চ মানুষ হলে ।। উপরোক্ত প্রমান সাপেক্ষে আমরা বলতে পারি অন্যান্য সব অবতারের শেষ অবতার এবং গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুই যে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ রূপে শ্রীধাম ওড়কান্দি এসে জন্ম গ্রহন করছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই । শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর পূর্নাবতার :- শ্রীশ্রী হরিলীলমৃত গ্রন্হে কবি রসরাজ তারক চন্দ্র সরকার লিখেছেন — রাম হরি কৃষ্ণ হরি শ্রী গৌরাঙ্গ হরি , হরিচাঁদ আসল হরি পূর্নানন্দ হরি ।। যুগে যুগে আবিরভুত সব অবতার মাত্রই শক্তির প্রতীক ।প্রত্যেকেই অসীম শক্তির আধার । তাদের সাথে সাধারন মানুষের যথেষ্ঠ পার্থক্য , কোন তুলনাই চলেনা । তাদের কৃত কম্মও অসাধারন , অলৌকীক, অতুলনীয় । সব্বগুনযুক্ত সকল শক্তির আধার স্বরূপ ভগবান অবতাররূপে তথা মানুষরূপে ধরাধামে আসেন । সাধারন মানষের সঙ্গে তাদের পার্থক্য , তাঁরা অন্তর্যামী , দুরদ্রষ্টা , ভবিষ্যত বক্তা । অবতারের শক্তি অপ্রতিহত ভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং সকলেই তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয় । এসব গুন সাধারন মানুষের মধ্যে দেখাযায় না । আমাদের ধম্মীয় শাস্ত্র গ্রন্হাদিতে প্রমানিত হয় পুর্বেরকার কোন অবতারই পূর্নাবতার নন । ভগবান রাম , কৃষ্ণ প্রভৃতি অবতারের কৃত কম্মও পক্ষপাত মুক্ত নয় । তাছাড়া এই অবতারগন সকলেই কোন না কোন গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়েছেন , সাধনা করেছেন , দেব দেবীর পূজা করে তাকে সন্তুষ্ট করে আপন অভীষ্ট পুরন করেছেন । বিনা সাধনায় তারা কিছুই করতে পারেননি । কিন্তু হরিচাঁদ ঠাকুরের লীলা সবকিছুই অন্যান্য অবতার থেকে স্বতন্ত্র্য । তাকে কারো কাছ থেকে দীক্ষা নিতে হয়নি , সাধন-ভজন করতে হয়নি , মন্ত্র-তন্ত্রও জপ করতে হয়নি । তার জীবনে যা কিছু ঘঠেছে সব কিছুই বৈচিত্রময় , অলৌকীক । ঠাকুরের নিজ মুখের বানী– অংশ অবতার যত পূব্বেতে আইলো, আমি পূন জানি তারা সকলি জুটিল ।। রাম,কৃষ্ণ,বৌদ্ধ আদি অথবা গৌরাঙ্গ , আমাকে সাধনা করে পেতে মম সঙ্গ ।। পূ্ন আমি সব্বময় অপুর্নের পিতা , সাধনা আমার কন্যা আমি জন্মদাতা ।। আমি হরিচাঁদ এবে পূর্নের অবতার , অজর অমর আমি ক্ষীরোদ ঈশ্বর ।। উপরোক্ত বানীর তাতপর্য বিশ্লেষন করলে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে , হরিচাঁদ ঠাকুর ছাড়া এ পর্যন্ত যে সমস্ত অবতার হয়েছেন তারা সবাই ঈশ্বরের অংশ মাত্র , কেউই পুর্নাবতার নন । গুরুচাঁদ চরিতে’ বলা হয়েছে — যারা অবতার হলো সকলি অপুর্ন , পুনর্শক্তি বিনা কভু কলি নহে জীর্ন ।। এজন্যই পুর্নব্রহ্ম হরিচাঁদ পূর্ণ শক্তি নিয়ে ধরায় অবতীর্ন হয়েছিলেন । তিনি ধরায় এলে অন্যান্য যুগের ভক্তগন এসে জন্মগ্রহন করেন– স্বয়ং এর অবতার হয় যেই কালে, আর আর অবতার তাতে এসে মিলে ।। শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত । এর প্রমান মিলে শ্রীশ্রীহরিলীলামৃতে বর্নীত বিভিন্ন উপাখ্যানগুলিতে । হীরমনের রাম-রূপ দর্শন, ঠাকুর হরিচাঁদের সহিত গোস্বামী লোচনের মিলন, গোস্বামী গোলকচাঁদের চতুর্ভূজ রুপ দর্শন, মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের উপাখ্যান, শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের পদে রামচাদের পদ্ম দর্শন, কলমদাস বৈরাগীকে কৃষ্ণ রুপ দেখানো ইত্যাদি আরো অসংখ্য ঘটনা ঠাকুরের পূর্ণতার বহিঃপ্রকাশ । শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের বাল্য ও কৈশোরের উপাখ্যান গুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ঐশী শক্তির প্রকাশ :- শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানাধীন ওড়াকান্দি গ্রামে । তার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়টা বিস্ময়কর ও অলৌকিক কর্মকান্ডে বৈচিত্রময় । ভুমিষ্ঠ হওয়া মাত্রই তিনি তিন বার –আমি হরি,আমি হরি, আমি হরি– বলে নিজের পরিচয় দান করেছিলেন । তার মুখের এই অনন্য-অসাধারন বানী শুনেও সাধারন মানুষ তাকে চিনতে পারেনি । কৈশোরে তাঁর বাল্যসখা বিশ্বনাথ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তার প্রান দান করে ঠাকুর হরিচাঁদ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই নিদানের কর্তা হরি । এই ঘটনার পরপরই ঠাকুর হরিচাঁদ আরো এক অলৌকিক লীলা প্রকাশ করলেন । সফলাডাঙ্গায় অবস্হিত এক -বার-এর শক্তিকে আকর্ষন করলে -বার- শক্তিহীন হয়ে পড়ে । শ্রীশ্রীহরীলীলামৃতে আছে– –ঠাকুরের জ্যোতি হরিচাঁদেতে মিশিল, ব্রজনাথে লয়ে হরি নিজালয়ে গেল ।। যে মানুষ মম দেহে আবির্ভুত ছিল , ঐ যে সে মানুষ মানুষে মিশে গেল ।। এই সব দেখে সাধারন মানুষ বুঝলো, যশোবন্ত নন্দণ হরি ব্রহ্মপরাতপর । ঠাকুর হরিচাঁদ তাঁর বল্য সখাদের নিয়ে মাঠে গরু চড়াতেন । গরু রাখতে গিয়ে তিনি রাখালিয়া খেলার ছলে ব্রজলীলারভাব ও কার্যকলাপ করিতেন । বিষধর সাপ ধরে খেলানো, আবা ধ্বনি দিয়ে গরুদের ডাকা মাত্র ছুটে আসা, দাদা কৃষ্ণদাসের মৃত গরুর জীবন দান প্রভৃতি লীলা দেখে সাধারন মানুষ বলতো, হরিচাঁদ অলৌকিক ও ঐশী শক্তির অধিকারী । পরবর্তীকালেও তিনি অনেক অলৌকিক লীলা করেছেন । হীরমনের রাম-রূপ দর্শন, ঠাকুর হরিচাঁদের সহিত গোস্বামী লোচনের মিলন, গোস্বামী গোলকচাঁদের চতুর্ভূজ রুপ দর্শন, মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের উপাখ্যান, শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের পদে রামচাদের পদ্ম দর্শন, কলমদাস বৈরাগীকে কৃষ্ণ রুপ দেখানো ইত্যাদি আরো অসংখ্য ঘটনা ঠাকুরের পুর্নতার বহিঃপ্রকাশ । এছাড়াও তার মুখের কথায় কত অপুত্রক পুত্র পেল, কত মরা বাঁচল, কত অন্ধ ফিরে পেল তার দৃষ্টি শক্তি, কত রোগী রোগ মুক্ত হলো তার হিসেব মেলা ভার । এসব অসম্ভব ঘঠনা প্রতক্ষ্য করে মানুষের বিশ্বাস ক্রমেই বাড়তে লাগলো, দলে দলে মানুষ তাঁর কাছে ছুটে আসতে লাগলো । শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত গ্রন্হে ঠাকুরের অলৌকিক লীলা সামান্যমাত্র বর্নীত হয়েছে । বহু ঘটনা আজো মানুষের অজানা ও অপ্রকাশিত রয়ে গেছে । ঠাকুর হরিচাঁদ আত্মপ্রচার পছন্দ করতেন না । তাঁর ঘটনাবহুল জীবনী কিছু লেখা সত্বেও ঠাকুরের অনিচ্ছার কারনে দৈবযোগে হারিয়ে যায় । এই ঘটনা শ্রীশ্রীহরীলীলামৃত গ্রন্হে -গ্রন্হ রচনার ইতিবৃত্ত- নামক আখ্যানে বর্নীত আছে । কিছু ঘটনা লেখার পর যখন ঠাকুরকে পড়ে শোনানো হয় তখন ঠাকুর বলেন– ক্ষান্ত কর লেখলেখি বাহ্য সমাচার, অন্তরের মাঝে রাখ আসন আমার ।। হেন কালে দৈবযোগে লীলাগ্রন্হ খানি, আপনি হরিয়া লন দেবী বীনাপানি ।। পরবর্তিকালে ঠাকুরের কৃপাদেশে কবি রসরাজ তারক চন্দ্র সরকার শ্রীশ্রীহরীলীলামৃত গ্রন্হ রচনা করেন ।
পূর্ণব্রহ্ম শ্রীশ্রীহরিচাঁদের রূপ বর্ণনা
উর্দ্ধভাবে সুশোভিত রেখা হাতে পায়।
ধ্বজ বজ্রাংকুশ আর অহিফণা তায় ॥
শঙ্খ চক্র মিন জম্মু নামে যেই ফল।
কল্পতরু শ্রীপতাকা জাহ্নবী বিকল ॥
গজস্কন্ধ কোকনদ কর পদতল।
নখ চন্দ্ৰ নখ মুদ্ৰা অতি সুনির্মল ॥
নখ চিক্কন ত্বক চিক্কন নাভী সুগভীর ।
আজানু লম্বিত বাহু কোমল শরীর ॥
চক্ষু কোন শিরা লাল পলাশ লোচন ।
দক্ষিণ অঙ্গে রক্ত তিল রক্তিম বরণ ॥
সুচিক্কন জোড়া ভুরু কাদম্বিনী সম ।
ঈশ্বর বত্রিশ চি€ নর লীলাত্তম ॥
সুধাবন্ত ছত্র আর সুধাকর যব।
ঠাকুরের চি€ এই কহিলাম সব ॥
এর ১, ২, ৩, চিহ্ন দেখিবে যাহারে।
ততখানি অংশ বলি জানিবে তাহারে ॥
শ্রীশ্রীহরিচাঁদের স্বাদশ আজ্ঞা
১। সদাসত্য কথা বলবে।
২। পরস্ত্রীকে মাতৃজ্ঞান করবে।
৩। পিতা মাতাকে ভক্তি কর।
৪। জগতকে প্রেম কর।
৫। চরিত্র পবিত্র ব্যক্তির প্রতি জাতিভেদ ক’রোনা ।
৬। কারো ধর্ম নিন্দা ক'রোনা।
৭। বাহ্য অঙ্গ সাধু সাজ ত্যাগ কর।
৮। হাতে কাজ মুখে নাম করবে।
৯। শ্রীশ্রীহরি মন্দির প্রতিষ্ঠা কর।
১০। ষড় রিপু থেকে সাবধান থাকবে ।
১১। দৈনিক প্রার্থনা কর।
১২ । ঈশ্বরকে আত্মদান কর।
হরিচাঁদ ঠাকুরের অষ্টোত্তর নাম
১. রামকান্ত রাখে নাম ‘বাসুদেবেম্বর’।
২. ‘পূর্ণ হরিচাদ’ নাম ধরাতে প্রচার।
৩. হরিদাস’ বলে ডাকে পিতা যশোমন্ত্র।
৪. মাতা অন্নপূর্ণা ডাকে ‘হরি প্রাণবন্ত’।
৫. গোলক রাখিল নাম ‘জয় গৌর হরি।
৬. দশরথ রাখে নাম ‘পর ব্যাথা ধারী’।
৭. শ্রীনন্দ দুলাল বলে ব্রজ মহামতি।
৮. রাখাল বালক ডাকে রাখালের পতি।
৯. হীরামন রাখে নাম ‘কমল লোচন’।
১০ নাটুবর রাখে নাম ‘জীবের জীবন’।
১১. বিশ্বনাথ রাখে নাম ‘প্রাণ দাতাহার।
১২. দীননাথ নাম রাখে ‘দীনবন্ধু হরি’।
১৩. রামরত্ন রাখে নাম ‘নদীয়ার গোরা।
১৪. লোচন রাখিল নাম ‘হরি ননী চোরা’।
১৫. মৃত্যুঞ্জয় রাখে নাম ‘মদন মোহন’।
১৬. ‘কর্ণধর’ বলে ডাকে গোঁসাই বদন।
১৭. মহানন্দ রাখে নাম ‘ক্ষীরদ বিহারী।
১৮ শ্রীরামভরত বলে সূত্রধর হরি’।
১৯. চৈতন্য রাখিল নাম ‘দর্পচূর্ণকারী।
২০, শ্রীরাম কুমার বলে ‘হরি বিষ হরি”।
২১. ভারক রাখিল নাম’ গৃহীব্রহ্মচারী।
২২. অশ্বিনী রাখিল নাম ‘বাঁকাসখাছরি’।
২৩. বুদ্ধি মন্ত রাখে নাম ‘বাবা জগবন্ধু’।
২৪. মঙ্গল রাখিল নাম ‘ছরি প্রেম সিন্ধু’।
২৫. শ্রীহরি ওঝার ওঝা বলে কালাচাঁদ।
২৬. শ্রীউমাচরণ বলে ‘আকাশের চাঁদ’।
২৭. শান্তিমাতা রাখে নাম ‘দেব নারায়ন।
২৮. কেনাই রাখিল নাম ভক্তপ্রাণধন’।
২৯. মালাদেবী রাখে নাম ‘স্বয়ং ভগবান’।
৩০. রামকৃষ্ণ রাখে নাম ‘হরিচাঁদ প্রাণ’।
৩১. উদয় পাগল বলে ‘শ্রীমধুসূধন’।
৩২. হরিপাল রাখে নাম ‘পতিত পাবন’।
৩৩, লালচাঁদ রাখে নাম ‘ছরি তমোনাশ’।
৩৪. ‘জগৎ পালক’ বলে দাদা কৃষ্ণদাস।
৩৫. গোলক কীৰ্ত্তনে বলে ‘তারক ব্রহ্মহরি।
৩৬. অক্ষয় রাখিল নাম হরি পুরী পুরী।
৩৭. ভবানী রাখিল নাম ‘পিতা মৃত্যুঞ্জয়’।
৩৮. দারুব্রহ্ম বলে ডাকে ভক্ত পান্ডাদ্বয়।
৩৯. জানকী রাখিল নাম ‘দুৰ্ব্বাদল শ্যাম’।
৪০. চন্দ্ৰকান্ত রাখে নাম ‘ধনুধারী রাম’।
৪১. শ্রীগুরুচাঁদ রাখে নাম ‘অনাদির মূলা।
৪২. সত্যভামা রাখে নাম ‘অকুলের কুল’।
৪৩. কোষ্ঠীস্বর রাখে নাম ‘স্বয়ং অবতার’
৪৪. রামচাঁদ রাখে নাম ‘হরিমূলাধার’।
৪৫. জগদিশ রাখিল নাম হরি ইচ্ছাময়।
৪৬. যুধিষ্ঠির রাখে নাম ‘হবি দয়াময়’।
৪৭. কমল রাখিল নাম ত্রিভঙ্গ কানাই’।
৪৮. পাবর্তী রাখিল নাম ‘চৈতন্য গোঁসাই।

৪৯. ভিকমাতা রাখে নাম ‘ভুবন মোহন”।
৫০. ব্রহ্মণ্য দেবের দেব বলে দ্বিজগণ।
৫১. রামধন রাখে নাম ‘নিদানের বন্ধু।
৫২. স্বরূপ রাখিল নাম ‘করুণার সিন্ধু’।
৫০. কামিনী রাখিল নাম ‘হরি চিন্তামণি’।
৫৪. ভুজঙ্গ নাচায়ে হোলো ‘ভুজঙ্গের মণি’।
৫৫ নায়েরী রাখিল নাম ‘বাঞ্ছাপূর্ণকারী’।
৫৬. মহেশ রাখিল নাম শ্রীমুরারী হরি’।
৫৭. চকমন রাখে নাম ‘হরি রক্ষাকারী’।
৫৮. জয়চাঁদ রাখে নাম ‘মহাবীর হরি’।
৫৯. গোবিন্দ রাখিল নাম ‘মনপ্রাণ আত্মা’।
৬০. বিধবা রমনী বলে ‘হরি ত্রাণ কর্তা’।
৬১ শ্রীউদয় বালা বলে ‘ব্রহ্ম সনাতন’।
৬২. ‘ভবপারের মাঝি’ বলে ভকত ভজন।
৬০, শ্রীবংশী রাখিল নাম ‘অন্তর্যামী হরি।
৬৪. শ্ৰীনব গোপাল বলে ‘পারের কান্ডারী’।
৬৫. কাশীশ্বরী রাখে নাম ‘প্রাণকান্ত হরি।
৬৬. অক্রুর রাখিল নাম ‘হরিচক্রধারী’।
৬৭ মহানন্দ রাখে নাম অমৃতের খনি’।
৬৮. ‘বাঞ্ছাকল্পতরু’ বলে ভক্তা তীর্থমণি।
৬৯. আনন্দ রাখিল নাম দুর্ব্বলের বল’।
৭০. দুঃখিনী রমনী বলে ‘ঠাকুর দয়াল’।
৭১. অলকা রাখিল নাম ‘মহাশক্তিধারী।
৭২ শোভনা রাখিল নাম ‘জ্যেতির্ময় হরি।
৭৩. নকুল রাখিল নাম ‘অকুল কান্ডারী’।
৭৪. যাদব রাখিল নাম চতুর্ভূজধারী।
৭৫. গোপাল রাখিল নাম বিপদভঞ্জন।
৭৬. আনন্দা রাখিল নাম ‘দুঃখিনীর ধন।
৭৭. হরিবর রাখে নাম ‘নয়নের মণি’।
৭৮. ‘ভকত বৎসল’ বলে ডাক্তার তারিনী।
৮৯. দেবীচাদ রাখে নাম ‘চারু চন্দ্রানন’।
৮০, অমৃত রাখিল নাম ‘পুরুষ মহান’।
৮১. বিচরন রাখে নাম ‘জগতের পিতা।
৮২. ইন্দুমতী রাখে নাম ‘প্রাণের দেবতা’।
৮৩. বিপিন রাখিল নাম ‘পদ্মরাণ মণি।
৮৪. তিন কড়ি রাখে নাম ‘হৃদয়ের মণি’।
৮৫. কাঞ্চন রাখিল নাম জগতের পতি’।
৮৬. ধীরেন্দ্র রাখিল নাম ‘অগতির গতি’।
৮৭. ভরত রাখিল নাম ‘জগৎ জীবন’।
৮৮. রূপচাঁদ রাখে নাম ‘মনুষ রতন’।
৮৯. পরিক্ষীৎ রাখে নাম ‘দয়ার সাগর’।
৯০. মালঞ্চ রাখিল নাম ‘প্রভু সৰ্ব্বেশ্বর।
৯১. রমনী রাখিল নাম ‘শমন দমন’।
৯২. পাষন্ডীরা রাখে নাম ‘পাষন্ড দলন’।
৯৩, যজ্ঞেশ্বর রাখে নাম ‘প্ৰভু কমলাখি’।
৯৪. রতন রাখিল নাম ‘মন প্ৰাণ পাখি’।
৯৫. শ্রীরাম চরন বলে ‘ভকত মোহন’।
৯৬. কৃষ্ণধন রাখে নাম ‘অধম তারন।

৯৭. তপস্বী রাখিল নাম ‘প্রভু গুণধাম’।
৯৮. ‘বিশ্বপতি বলে ডাকে ভক্ত চিন্তারাম।
৯৯. সাধুবৈদ্য রাখে নাম অনাথের নাথ।
১০০, রজনী রাখিল নাম ‘প্ৰভু জগন্নাথ’।
১০১. যাদব মল্লিক বলে ‘মহাভাব ময়’।
১০২. শ্রীকুঞ্জ রাখিল নাম ‘প্রভু প্রেমময়।
১০৩. রাধ্যাখ্যাপা রাখে নাম ‘ব্রহ্ম পরাৎপর।
১০৪. ব্রহ্মণ উকিলে বলে ‘প্রভু জাতিশ্বর’।
১০৫ শ্রীনীলরতন বলে ‘প্ৰণ কৃষ্ণধন।
১০৬. কুলের কামিনী ডাকে ‘ব্রজের জীবন’।
১০৭. সিন্ধুমণি রাখে নাম ‘ব্রজনীল মণি’।
১০৮. ভক্তগনৈ রাখে নাম ‘ভক্ত শিরোমনি’।

শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অষ্টোত্তর শতনাম বা হরিচাঁদ ঠাকুরের ১০৮ নাম সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বন্দনা
জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস ।
জয় শ্রীবৈষ্ণব দাস জয় গৌরি-দাস ॥
জয় শ্রীস্বরূপদাস পঞ্চ সহোদর ।
পতিতপাবন হেতু হৈলা অবতার ॥
জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন ।
জয় শ্রীগোলকচন্দ্ৰ জয় শ্ৰীলোচন ॥
জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয় ।
জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দ ময় ৷
জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ
নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ ||
🙏🙏🙏জয় হরি বোল 🙏🙏🙏
অথ মঙ্গলাচরণ
হরিচাঁদ চরিত্রসুধা প্রেমের ভান্ডার।
আদি অন্ত নাহি যার কলিতে প্রচার ॥
সত্য ত্রেতা দ্বাপরের শেষ হয় কলি।
ধন্য কলিযুগ কহে বৈষ্ণব সকলি ॥
তিন যুগ পরে কলি যুগ এ কনিষ্ঠ।
কনিষ্ঠ হইয়া হৈল সৰ্ব্বযুগ শ্রেষ্ঠ ॥
এই কলিকালে শ্রীগৌরাঙ্গ অবতার ।
বর্ত্তমান ক্ষেত্রে দারুব্রহ্মরূপ আর !
যে যাহারে ভক্তি করে সে তার ঈশ্বর ।
ভক্তিযোগে সেই তার স্বয়ং অবতার ॥
হয়গ্রীব অবতার কপিলাবতার।
অষ্টাবিংশ অবতার পুরাণে প্রচার ॥
মৎস্য কূর্ম্ম বামন বরাহ নরহরি।
ভৃগুরাম রঘুরাম রাম অবতরি ॥
ঈশ্বরের অংশকলা সব অবতার প্রথম পুরুষ অবতার রঘুবর !!
নন্দের নন্দন হ'ল গোলোকের নাথ ।
সংকর্ষণ রাম অবতার তাঁর সাথ ॥
সব ঈশ্বরের অংশ পুরাণে নিরখি।
বর্তমান দারু ব্রহ্ম অবতার কল্কি ॥
সব অবতার হ'তে রাম দয়াময় ।
দারুব্রহ্ম দয়াময় কৃষ্ণ দয়াময় ॥
পূর্ণব্রহ্ম পূর্ণানন্দ নন্দের নন্দন।
সেই নন্দসূত হ'ল শচীর নন্দন ॥
যে কালে জন্মিল কৃষ্ণ পূর্ণব্রহ্ম নয় ।
পূৰ্ণ হ'ল যে কালে পড়িল যমুনায় ॥
শচীগর্ভে জন্ম ল'য়ে না ছিলেন পূর্ণ।
দীক্ষাপ্রান্তে পূর্ণ নাম শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য ॥
তখন হইয়া পূর্ণ সন্ন্যাস করিলে ।
আটচল্লিশ বর্ষ পরে মিশিলা উৎকলে ॥
সকল হরণ তাঁরে বলি হরি।
রাম হরি কৃষ্ণ হরি শ্রীগৌরাঙ্গ হরি ॥
প্রেমদাতা নিত্যানন্দ তাঁর সমিভ্যরে ।
হরিকে হরয় সেই হরিভক্ত দ্বারে ।
নিত্যানন্দ হরি কৃষ্ণ হরি গৌর হরি ।
হরিচাঁদ আসল হরি পূর্ণানন্দ হরি ॥
শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের প্রতি প্রণাম মন্ত্র:-
শ্রী শ্রী হরিচন্দ্রায় নমো নমঃ| শ্রী শ্রী হরিচন্দ্রায় সর্বভূতায় আত্মা রূপায় ভগবতে নমো নমঃ| ত্বমেক স্বয়ং নিজগুণেন (বলোকায়/বালিকায়) কৃপাংকুরু| নমো শ্রী হরিচন্দ্রায় জগৎ হিতায় সারাৎ সারায় জগদীশ্বরায় নমো নমঃ |
শ্রী শ্রী শান্তি মাতার প্রতি প্রণাম মন্ত্র :-
ওঁ নমো শ্রী শ্রী হরি প্রিয়া শান্তি দেব্যৈ নমো। লক্ষ্মী স্বরূপিনী, সর্ব বিঘ্ন বিনাশিনী, শক্তি রূপিণী রক্ত জবা সৌম্য কান্তি লোচন তনয়া, কমল লোচনা, সর্ব মঙ্গলা, অশান্তি বিনাশিনী, শান্তি স্বরূপিনী, কৈবল্য দায়িনী, মাতৃ রূপিনী, হরি ভক্তি প্রদায়িনী পরম করুনাময়ী শান্তি দেব্যৈ নমো নম:।
শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ চরিত
বন্দনা
জয় জয় হরিচাঁদ ক্ষীরোদ ঈশ্বর।
জয় শান্তি মাতা পদে ব্রহ্মান্ড যাহার।।
জয় মহাকাল গুরুচাঁদ গুণমণি।
জয় সত্যভামা দেবী জগত জননী।।
জয় প্রভু পুত্র দেব শ্রী শশীভূষণ।
জয় শ্রী প্রমথ চাঁদ জগত কল্যাণ।
উঠুক নিখিল বিশ্বে তব জয় গান।।
জয় শ্রী তারক চাঁদ কবি শিরোমণি।
“হরিলীলামৃত” রচি’ মাতা’লে অবনী।।
তোমার গুণের কথা কহন না যায়।
তব গুণে বাধ্য সদা হরি রসময়।।
জয় শ্রী গোপালচাঁদ অপার মহিমা।
দেবে নাহি পারে, নরে কিবা দিবে সীমা।।
তব করুণায় নাথ আছি ধরাপরে।
হরি গুরুচাঁদ তত্ত্ব শেখালে সবারে।।
বিপিন যাদব জয় নকুলের জয়।

দীন মহানন্দ যাচে শ্রীপদ আশ্রয়।।

শ্রী হরির ভক্ত পদে করি শির নত।
মনের বাসনা রচি শ্রী গুরু-চরিত।।
“গুরু-কৃপাহি কেবলং”-সেই মাত্র বল।
পুরিলে মনের সাধ জনম সফল।।
~পিতা-মাতার বন্দনা~
_______________________
পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম সর্ব শাস্ত্রে কয় "
ভাবিয়া পিতার পদ রাখিনু মাথায় ॥
যাহার কৃপাতে আমি এ জগতে আসি "
তাঁহার স্মরণে পাপ খন্ডে রাশি রাশি ॥
না বুঝিয়া কত পাপ করেছি চরণে "
এ পাপের নাহি ক্ষমা সে চরণ বিনে ॥
কত কষ্টে পিতা মোরে করেছে পালন "
পিতৃঋণ শোধ দিতে পারে কোন জন ॥
পিতা যে পরম বস্তু সাধনের ধন "
পূজিলিনা সে চরণ ওরে মূঢ় মন ॥
মায়া জালে হয়ে বন্দী সে সব ভূলিলি "
ঘরেতে রাখিয়া ধন বাহিরে খুজিলি ॥
যখনে ছিলিরে মন পিতৃ মণি পুরে "
তথা হতে আইলিরে জননী জঠরে ॥
দশমাস দশদিন ছিলি মাতৃ গর্ভে "
মাতা মোর কত কষ্ট করে কত ভাবে ॥
অসহ্য যাতনা মাতা সহে হাস্য মূখে "
আশাতে বাধিয়া বুক সদা থাকে সুখে ॥
দশমাস দশদিন যখন হইল "
প্রসব করিতে মাতা কত কষ্ট পেল ॥
তারপর কতভাবে করেছে পালন "
স্তন দুগ্ধ দিয়ে মোরে বাঁচায়েছে প্রাণ ॥
তবু মাতা দিনরাত প্রফুল্ল অন্তরে "
স্নেহ ভরে কোলে করে কত যত্ন করে ॥
নিজে না খাইয়া মাতা খাওয়াছে মোরে "
মলমূত্র ধোয়ায়েছে ঘৃণা নাহি করে ॥
এত কষ্ট করে মাতা তবু হাসি মুখ "
পুত্রের বদন হেরী পাসরিল দুঃখ ॥
.মা. শব্দের তুল্য দিতে আর কিছু নাই "
ঐ চরণে গয়া গঙ্গা সব কিছু পাই ॥
এ হেন মায়ের পদ ভাবিয়া অন্তরে "
লিখিলাম এই পুথি মা-বাবার বরে ॥
মাতা পিতার শ্রীচরণে করিলাম স্তুতি "
পাপ দেহে যেন মোর জাগায় ভক্তি ॥
‌🙏🙏🙏জয় হরি বোল 🙏🙏🙏
পিতৃদেবের প্রতি প্রনাম মন্ত্র:-
পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম সৃষ্টিকর্তা পিতা।
পিতার প্রীতিতে তৃপ্ত সকল দেবতা।।
পিতার কারনে সবে আসে ধরাধাম।
জানাই পিতার পদে স্বভক্তি প্রনাম।।
আজন্ম শুভানূধ্যায়ী হে পরম কল্যাণকামী
পিতৃদেব তোমার বাঞ্চিত আশীর্বাদ বর্ষণ
করে আমার স্বশ্রদ্ধেয় প্রণাম তুমি গ্রহণ কর |
(সংকলক:- কৃত্তিবাস ঠাকুর)
মাতৃদেবীর প্রতি প্রনাম মন্ত্র :-
জননী জঠর যেন পার্থিব মৃত্তিকা।
ধরিত্রী ধারিকাসম জগৎ পালিকা।।
বেদনা হারিনী মাতা দূর্গতিনাশিনী।
নয়ন মুদিয়া ভাবি তোমার শ্রীচরণ দুখানি।।
যাহার অসীম সাধনায় ও অপার স্নেহত্যাগ
তিতিক্ষায় এই ধরাধামে আগমন, জীবন
ধারন, বেদনা হারিনী, দূর্গতি নাশিনী মাতৃদেবী
তোমার রাতুল চরণে আমার স্বভক্তি পূর্ণ প্রণাম |
হে করুণাময়ী জীবন ধাত্রী, সাক্ষাৎ দেবী,
তোমার বাঞ্চিত শুভ আশীর্বাদ বর্ষণ কর |
(সংকলক:- কৃত্তিবাস ঠাকুর)
শ্রীগুরুদেবের প্রতি প্রনাম মন্ত্র :-
শূন্যকার মূর্তিযার ব্যাপ্ত যিনি চরাচর।
তার মর্ম যে জানাল প্রণমী চরণে তার।
জ্ঞানের আলোক দিয়ে দূর করে অন্ধকার।
দিব্য দৃষ্টি দেন যিনি প্রণমী চরণে তার।
আমার কারনে যিনি ধরিলেন নরদেহ।
মানব স্বভাব ধরি করিছেন কত স্নেহ।
জানা কি অজানা মোর বিপদ আপদ রাশি।
নাশেন অলক্ষ্যে থাকি করুনায় ভালবাসি।
চিত্তের গুহায় মম জীবাত্মা ঘুমায়ে রয়।
তাহারে জাগাতে তত্ত্ব শিখালেন দয়াময়।।
পরম বান্ধব সেই পরমআত্মার সম।
নমঃ গুরু (গুরুদেবের নাম ) নমঃ হে পুরুষোত্তম।।
তাহার অর্ধাঙ্গিনী যিমি মাতা (গুরুমাতার নাম) কৃপাময়ী।
করুণা মাগিয়া তার চরণে প্রনত হই।।
(সংকলক:- কৃত্তিবাস ঠাকুর)
শ্রী হরিভক্তের পূজামন্ত্র :-
হে আমার প্রাণ প্রিয় হরিভক্তগন।
করজোড়ে বন্ধি আমি সবার চরণ।।
আর নামি হতে নাম বড় সর্বশাস্ত্রে কয়।
তার চেয়ে ভক্ত বড় হরিগুরু কয়।।
লীলামৃতে আছে তাহার জলন্ত প্রমান।
গোলককে সেবিলে তুষ্ট হয় ভগবান।
হরি আর হরিভক্ত এক দেহমন।
তার সাক্ষী দশরথ আর হীরামন।।
তাদের প্রহার চিহ্ন শ্রীহরি ধরিল।
ভক্ত আর ভগবান অভিন্ন হইল।।
ভক্ত কৃপা না হইলে হরি নাহি মিলে।
হরিভক্তি লাভ হয় ভক্ত কৃপা হলে।।
ভক্তিহীন শক্তিহীন আমি অভাজন।
নিজগুনে কৃপা কর ওহে ভক্তগন।।
ভক্ত কৃপা ভিন্নভাবে গতিনাহি আর।
হরিভক্ত পদরজ: কামনা আমার।।
দিবানিশি যেন আমি ভক্তপদ স্মরি।
ভক্তপদ শিরে ধরি আমি যেন মরি।।
ভক্ত পদরজ: আর পদধৌত জল।
নিদান কালেতে যেন হয়গো সম্বল।।
আশীর্বাদ কর সবে প্রার্থনা জানাই।
শ্রীহরির চরণে পাই যেন ঠাঁই।।
(সংকলক:- কৃত্তিবাস ঠাকুর)
হরিবল নাকি হরিবোল
কবিয়াল অসীম সরকারের বিশ্লেষণে দেখে নেওয়া যাক।

ব্রহ্মের আদি উচ্চারিত শব্দ হচ্ছে ওম (ওঁ) এর আগে কোন শব্দ এই মহাবিশ্বে উচ্চারণ হয় নাই। একে বলে নাদ, নাদোধ্যম। “হরিবোল” বললে আর কিচ্ছু বলা লাগে না। এর মধ্যে ওঁ আছে, কামবীজও আছে। কাম বীজের মধ্যে ৫ টা অলংকার আছে। কি? ক, ল, ই, নাদ, বিন্দু। এই পাঁচটি ক্ষিতি অপ তেজ মরুত ব্যোম এর বীজ।

এই পাঁচটা অলংকার আছে। আকাশ বাতাস আগুন জল মাটি। এর পাঁচটা আলাদা বীজ আছে। হং যং রং বং লং। এই ‘হরিবোল’ টা আসল কোথা থেকে। হং যং রং বং লং এইটা যখনই আমরা বাংলায় নিয়ে আসলাম তখন ং উঠে গেল। হ য র ব ল। অন্তঃস্থ য। ঐ ওঁ এর বিন্দু এনে অন্তঃস্থ য এর তলায় লাগানো হল। এইবার কি হল? হ য় র ব ল। য় কে স্ত্রীয়াং ইফ প্রত্যায় করিলে কি হয়? ি (ই) কার হয়। তাহলে কি হল? হ ি র ব ল। অন্তঃস্থ আর থাকল না। স্ত্রীয়াং ইফ প্রত্যায় করে হ রি ব ল। বীজ হচ্ছে হরিবোল (হ রি বো ল)। তাহলে হরিবোল কি করে তৈরি হচ্ছে? যেটা হচ্ছে হ য র ব ল। আর ঐ কাম বীজে কি? আমি আগে বলেছি। ক ল ই নাদ বিন্দু। ক ল ই নাদ বিন্দু- হং যং রং বং লং। অর্থ কিন্তু এক। খুব ভালো করে বুঝতে হবে। তাহলে আমরা কি কি পাচ্ছি? ওঁ এর বিন্দু পেয়েছি। আর কাম বীজের যে পাঁচটা বীজ, তাও পেয়েছি। হং যং রং বং লং এর মধ্যে হ য় র ব ল। এইবার ওঁ এর যে আর তিনটা বীজ আছে। অ উ আর ম। অ হচ্ছে সৃষ্টি, উ হচ্ছে স্থিতি আর ম হচ্ছে লয়, ধ্বংসের বীজ। মতুয়াদের ধ্বংসের বীজ নাই। তার মানে যে খাটি মতুয়া হবে, সে সৃষ্টি ছাড়া এক বিন্দুও পাত করতে পারবে না। (সৃষ্টি ছাড়া পাত করলে) তাহলে সে মতুয়া হবে না। তাইতি আচার মালাই থাকুক আর যাই থাকুক। ইহাই তত্ত্ব। সৃষ্টি ব্যতিরেকে তোমার পিতৃধন ধরে রাখতে হবে। দশটা সন্তান হোক, আপত্তি নেই। তাছাড়া যেন তোমার পিতৃধন নষ্ট না হয়। ইহাই প্রকৃত ব্রজ তত্ত্ব, ইহাই প্রকৃত মতুয়া তত্ত্ব। এই জন্য বাবা, খুঁজলে প্রকৃত বৈষ্ণব, প্রকৃত মতুয়া খুব কমই পাওয়া যায়। একদম খাটি খাটি তত্ত্বের ঘরে গিয়ে......। বাবা, পরশমণি শোনা যায়, কয়খান দ্যাখছেন? ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট গোল্ড মেডেলিস্ট শোনা যায়, কয়জন পায়? তাহলে ম বীজ বাদ। দুই বীজ থাকল। সৃষ্টি স্থিতি। এইজন্য মতুয়াদের সৃষ্টি আছে। অ+উ; কি হয় বাবা? বা অ আর উ যোগ করলে কি হয়? ো (ও) হয়। অ+উ; স্বরে অ যোগ হ্রস উ = ো (ও)। ঐ ো কার এনে ব এর সঙ্গে লাগানো হল। তাহলে হ রি বো ল। হরিবোল। হরিবোল। হরিবোল বললে ওঁ জপা লাগে না, কাম বীজ জপা লাগে না। কোন মন্ত্র লাগে না।

হরিবল = হরির বল/শক্তি, সে জন্য হরিবল ঠিক হতে পারে।

আবার হরিবোল= হরির বোল/বাণী তাহলে এটাও ঠিক।

হরির বাণী যদি কেউ মানে তবে আধ্যাত্ম ও জাগতিক সব দিকেই ভালো হবে। ফলে 'হরিবোল' অধিকতর সঠিক।
মতুয়া কারা ? মতুয়া সম্প্রদায় কে গড়ে তোলেন ?
মতুয়া সনাতন হিন্দু ধর্মের একটি বিশেষ সম্প্রদায়। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার ওড়াকান্দি নিবাসী হরিচাঁদ ঠাকুর প্রেমভক্তিরূপ সাধনার ধারাকে আরো গতিশীল ও বেগবান করার জন্য যে সহজ সাধন পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিলেন, তাঁকে বলা হয় ‘মতুয়াবাদ'। আর এই মতবাদের অনুসারীদেরকেই মতুয়া নামে অভিহিত করা হয়।

মতুয়া শব্দটির অর্থ মেতে থাকা বা মাতোয়ারা হওয়া। হরিনামে যে মেতে থাকে বা মাতোয়ারা হয়, সে-ই মতুয়া। মতান্তরে ধর্মে যার মত আছে সেই মতুয়া। অর্থাৎ ঈশ্বরে বিশ্বাস, গুরু-দেবতা-ব্রাহ্মণে ভক্তিশ্রদ্ধা, হরিনামে রুচি ও প্রেমে নিষ্ঠা আছে যার, সে-ই মতুয়া। মতুয়া মতবাদে বিশ্বাসীরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী, তাঁরা বৈদিক ক্রিয়া- কর্মে আস্থাশীল নয়। তাদের বিশ্বাস ভক্তিতেই মুক্তি। তাদের সাধন- ভজনের মাধ্যম হচ্ছে নাম সংকীর্তন। মতুয়া সাধন পদ্ধতির মাধ্যমে ঈশ্বরলাভ ও সত্যদর্শন-ই মূল লক্ষ্য। ঈশ্বর লাভের অন্যতম উপায় প্রেম। পবিত্রতা শরীর-মনে প্রেম জাগ্রত করে, ফলে প্রেমময় হরি ভক্তের হৃদয়ে আবির্ভূত হন।

আদর্শ গার্হস্থ্য জীবনযাপনের মাধ্যমেই মতুয়া ধর্মের চর্চা করা যায়। এই ধর্মের অনুসারীদের ১২টি নিয়ম পালন করতে হয়, যা দ্বাদশ আজ্ঞা নামে পরিচিত। মতুয়া ধর্মে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার দেয়া হয়েছে। এছাড়া মতুয়া মতবাদে বিধবা বিবাহকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং বাল্য বিবাহের বিরোধিতা করা হয়েছে। মতুয়া ধর্মপ্রচারককে গোঁসাই নামে অভিহিত করা হয়। নারী-পুরুষ যে কেউ এই ধর্মের প্রচার করতে পারেন। মতুয়ারা প্রতি বুধবার একত্রে সমবেত হয়ে হরি স্মরণ করে, একে বলা হয় হরিসভা। সবাই নাম সংকীর্তন করে এবং ভাবের আবেশে কীর্তন করতে করতে অনেক সময় বাহ্যজ্ঞানহীন হয়ে পড়ে। কীর্তনের সময় তাঁরা যে বাদ্যযন্ত্রগুলো ব্যবহার করে, তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কাঁসর, জয়ডঙ্কা, শঙ্খ, শিঙ্গা প্রভৃতি। গোঁসাইদের হাতে থাকে সোয়া হাত দীর্ঘ একটি দন্ড, যার নাম ছোটা। এই ছোটা নিয়ে তাঁরা সামনে এগিয়ে যান, আর ভক্তরা তাঁদের অনুসরণ করেন। তাঁরা সাদা রঙে বেষ্টিত লাল নিশান ও গলায় করঙ্গের মালা ধারণ করেন। মতুয়ারা হিন্দু ধর্মের একটি বিশেষ ধারা হলেও তাঁদের নিজস্ব ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। তাঁদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ ‘শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত’।

বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের প্রধান মন্দির অবস্থিত। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের ত্রয়োদশী তিথিতে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে সেখানে মেলা বসে। তাতে সমগ্র দেশ থেকে হাজার হাজার ভক্ত প্রণামী হিসেবে ধান-চাল-ডাল, তরি-তরকারি ইত্যাদি নিয়ে উপস্থিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, আন্দামানসহ বিভিন্ন স্থানেও মতুয়ারা রয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বেশ বড় সংখ্যক মতুয়া অনুসারীর বসবাস হওয়ায়, পশ্চিমবঙ্গের ভোটের রাজনীতিতে মতুয়াদের বেশ প্রভাব রয়েছে।

মতুয়া ধর্মের কয়েকটি মূল বাণী হলো: ‘হরি ধ্যান হরি জ্ঞান হরি নাম সার। প্রেমেতে মাতোয়ারা মতুয়া নাম যার; জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা। ইহা ছাড়া আর যত সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা; কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলে খাই। বেদ-বিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই।
🙏🙏🙏 জয় হরি বোল 🙏🙏🙏